বিশ্ববাজারে বিলিয়ন ডলারের বেশি হোম টেক্সটাইল রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২০১১-১২ অর্থবছরে। ওই অর্থবছর ১০২ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রফতানি হয় ৯০ কোটি ৬০ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল। তবে গত এক দশকে রফতানির এ লক্ষ্য পূরণ না হলেও নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে চাহিদা বৃদ্ধিতে চলতি অর্থবছর বিলিয়ন ডলার রফতানির প্রত্যাশা করছেন হোম টেক্সটাইল খাতসংশ্লিষ্টরা।
বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পরবর্তী সময়ে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে হোম টেক্সটাইলের রফতানি। সর্বশেষ ১১ শতাংশ কমে ২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্যটি রফতানি হয়েছে ৭৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারের। এমন পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছর আবারো প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের রফতানির স্বপ্ন দেখছেন নীতিনির্ধারক ও খাতসংশ্লিষ্টরা। প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসই এ স্বপ্ন দেখাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।
গত ১৬ জুলাই চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত রফতানি লক্ষ্য সরকারের পক্ষে ঘোষণা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখা সাপেক্ষে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। একই সুর হোম টেক্সটাইল খাতের উদ্যোক্তাদেরও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী চলতি অর্থবছর শেষে ৯৬ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রফতানি হতে পারে হোম টেক্সটাইল পণ্য।
হোম-টেক্সটাইল খাত সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের তৈরি প্রধান হোম টেক্সটাইল পণ্যগুলোর মধ্যে আছে ডুভেট কভার, কার্টেইন, কুশন কভার, টেবিল ক্লথ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রফতানি হয় ডুভেট কভার। বাংলাদেশ থেকে হোম টেক্সটাইলের পশ্চিমা বড় উল্লেখযোগ্য ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর
মধ্যে আছে আইকেইএ, এইচঅ্যান্ডএম হোম, ওয়ালমার্ট, লিডল, টার্গেট, কে-মার্ট ও ক্যারিফোর।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কভিড-১৯-এর প্রভাবে দেশের রফতানিমুখী শিল্পের অধিকাংশতেই ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়ে যায়। সম্ভাবনাময় হোম-টেক্সটাইল রফতানি খাতও এর ব্যতিক্রম নয়। মহামারীর কারণে বেশির ভাগ মানুষ বাসাতেই অবস্থান করছেন। যেহেতু মানুষের বেশির ভাগ সময় বাসাতেই কাটছে। ফলে হোম অ্যাপ্লায়েন্স এবং বেডিং, কার্টেন, কিচেন লিনেন—এ পণ্যগুলো বেশি ব্যবহার হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে যেটা হতো আমাদের রফতানি গন্তব্যগুলোর মানুষ বেশির ভাগ সময় বাসার বাইরে কাটাতেন। এখন উল্টোটা বাসায় তো থাকছেনই আবার ওয়ার্ক ফ্রম হোম চর্চাও বেড়েছে। এ পরিস্থিতির ধারাবাহিকতায় আগামী দিনগুলোতে হোম টেক্সটাইলের পতনের সম্ভাবনা একদমই নেই, বরং রফতানি প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
গত মে মাস থেকে পশ্চিমা দেশগুলো লকডাউন তুলে অবরুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। দেশের শীর্ষ হোম টেক্সটাইল প্রস্তুত ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফ্যাব্রিক্স জানিয়েছে ২০১৯ সালের মে মাসের তুলনায় চলতি বছর মে মাসে রফতানি ক্রয়াদেশ বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ।
জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফ্যাব্রিক্সের মার্কেটিং বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার মো. রাশেদ মোশাররফ বণিক বার্তাকে বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করে অনুধাবন করা যাচ্ছে যে চলতি অর্থবছর হোম টেক্সটাইলে কোনো পতন হওয়ার শঙ্কা খুবই কম। অর্থনীতি সচল হওয়ার পর আমাদের পণ্যের রিটেইলাররা যখন পুনরায় খুলেছে, তখন ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বিক্রি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এ প্রেক্ষাপটে আমরা বলতে পারি, আমাদের রফতানি চলতি অর্থবছর শেষে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
মানুষ যখন ঘরে বেশি থাকতে শুরু করেছে, তখন হোম টেক্সটাইল বেশি ব্যবহার করছেন এমন তথ্য উল্লেখ করে রাশেদ মোশাররফ বণিক বার্তাকে বলেন, হোম টেক্সটাইল থেকে বিলিয়ন ডলারের স্বপ্ন দেখার অন্যতম প্রধান কারণ হলো নভেল করোনাভাইরাস। মে মাসের পর জুনেও ক্রয়াদেশ বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। জুলাইয়ে দেখা যাচ্ছে ক্রয়াদেশ বেড়েছে ন্যূনতম ১৮ শতাংশ।
জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফ্যাব্রিক্স লিমিটেড গত বছর প্রায় ২০ কোটি ডলারের মতো রফতানি করেছে বিশ্ববাজারে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান উৎপাদন সক্ষমতা প্রতিদিন প্রায় তিন লাখ মিটার। হোম টেক্সটাইল প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের মধ্যে বাংলাদেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ছাড়াও আছে এসিএস, মমটেক্স, রিজেন্ট টেক্সটাইল ও সাদ মুসা। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা প্রতিদিন গড়ে প্রায় দেড় লাখ মিটার।
হোম টেক্সটাইল ছাড়াও চলতি অর্থবছর শেষে বিলিয়ন ডলারের বেশি রফতানি হবে এমন খাতগুলোর মধ্যে আছে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য। এ খাতটি চলতি বছর শেষে ১০৭ কোটি ডলারেরও বেশি পণ্য রফতানি হবে বলে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে রফতানির লক্ষ্য ১১৬ কোটি ডলার। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানির লক্ষ্য ৯২ কোটি ডলারের। বর্তমানে পোশাকই দেশের শীর্ষ রফতানি পণ্য। সম্ভাবনাময় অন্যান্য প্রধান রফতানি পণ্যের মধ্যে আছে হিমায়িত ও তাজা মাছ, চামড়াজাত বহির্ভূত পাদুকা, প্রকৌশল, ওষুধ ও প্লাস্টিক পণ্য।
0 Comments