Don't Miss

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Post your Ad Here. For More detals, Contact at mominurrashid@outlook.com

জিলহজ্জ মাসের কিছু সুন্নাহ ভিত্তিক আমল



আসছে পবিত্র জিলহজ্জ মাস। হজ্জ ও কুরবানির জন্য এই মাসটির মর্যাদা অনেক বেশি। বছরের শ্রেষ্ঠতম দিন হচ্ছে আরাফার দিন। এই দিনটি জিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ। এই মাসের প্রথম দশ দিনের আমলের চেয়ে উত্তম আমল খুব বেশি নাই। আসন্ন জিলহজ্জ মাসের দুই-একটি আমলের ব্যাপারে আজকের এই পোস্টে আলোকপাত করা হবে ইনশাআল্লাহ। যেন আমরা সুন্দর ভাবে পরিকল্পনা করে আমলগুলো করতে পারি।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের ‘আমলের চেয়ে অন্য কোন দিনের ‘আমলই উত্তম নয়। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ছাড়া যে নিজের জান ও মালের ঝুঁকি নিয়েও জিহাদে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না।
(বুখারী৯৬৯ http://ihadis.com/books/bukhari/hadis/969)

নিচে প্রথমে পয়েন্ট আকারে ও পরে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১। জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর শরীরের পশম, চুল, নখ ইত্যাদি না কাটা
২। জিলহজ্জের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকে বেশি বেশি তাকবীর পাঠ করা
৩। জিলহজ্জের মাসের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা
৪। আরাফার দিবসে অর্থাৎ ৯ জিলহজ্জ (ঈদের আগের দিন) রোজা রাখা

॥ ১। জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর শরীরের পশম, চুল, নখ ইত্যাদি না কাটা ॥

জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর কুরবানীদাতার জন্য শরীরের লোম, চুল, নখ ইত্যাদি না কাটা উত্তম। তাই যারা কুরবানি দেয়ার নিয়ত করেছি তারা ২১ জুলাই (২৯ জিলক্বদ) মাগরিবের আগেই এ জাতীয় পরিচ্ছন্ন হওয়ার কাজগুলো সেরে ফেলি। কারণ ২১ জুলাই সন্ধ্যায় জিলহজ্জ মাসের চাঁদ ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন যিলহজ্বের দশক শুরু হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কুরবানী করবে সে যেন তার চুল নখ না কাটে। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৭৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫২৩

এই হাদীসের উপর ভিত্তি করে ফকীহগণ কুরবানীকারীরর জন্য নখ-চুল না কাটাকে মুস্তাহাব বলেছেন। তবে এ হুকুম তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে যারা যিলকদের শেষে নখ-চুল কেটেছে। অন্যথায় নখ-চুল বেশি লম্বা হয়ে যাবে। যা সুন্নাতের খেলাফ। আর যে ব্যক্তি কুরবানী করবে না তার জন্য এ হুকুম প্রযোজ্য কি না এ ব্যাপারে কেউ কেউ বলেছেন, এ হুকুম শুধুমাত্র কুরবানীকারীদের জন্য প্রযোজ্য। তাদের দলীল পূর্বোক্ত হাদীস। আর কেউ কেউ বলেন, কুরবানী যারা করবে না তাদের জন্যও। তাদের দলীল হল:

আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে কুরবানীর দিবসে ঈদ (পালনের) আদেশ করা হয়েছে। যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন। এক সাহাবী আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানিহা থাকে (অর্থাৎ অন্যের থেকে নেওয়া দুগ্ধ দানকারী উটনী) আমি কি তা কুরবানী করতে পারি? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, তবে তুমি চুল, নখ ও মোঁচ কাটবে এবং নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কুরবানী বলে গণ্য হবে। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৬৫

এই হাদীসে যেহেতু কুরবানীর দিন চুল-নখ কাটার কথা আছে তাহলে এর আগে না কাটার দিকে ইঙ্গিত বুঝা যায়।

২. ওলীদ বিন মুসলিম বলেন, আমি মুহাম্মাদ বিন আজলানকে যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, আমাকে নাফে রাহ বলেছেন যে,
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর এক নারীর নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। মহিলাটি যিলহজ্বের দশকের ভেতর তার সন্তানের চুল কেটে দিচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, যদি ঈদের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে তবে বড় ভাল হত। মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৫৯৫

৩. এ সম্পর্কে আরেকটি বর্ণনা হল,

মুতামির ইবনে সুলাইমান আততাইমী বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি যে ইবনে সীরীন রাহ. যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা অপছন্দ করতেন। এমনকি এই দশকে ছোট বাচ্চাদের মাথা মুÐণ করাকেও অপছন্দ করতেন। আল মুহাল্লা, ইবনে হাযম ৬/২৮

এসব দলীলের কারণে কারো কারো মতে সকলের জন্যই যিলহজ্বের প্রথম দশকে নখ, গোফ ও চুল না-কাটা উত্তম। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই, এ বিধানটি কুরবানিদাতার জন্য তাকিদপূর্ণ, তার জন্য তা সুন্নত।

॥ ২। জিলহজ্জের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকে বেশি বেশি তাকবীর পাঠ করা ॥

জিলহজ্জের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকে তাকবীরে তাশরিকের বাক্যগুলো যত বেশি পারা যায় পড়তে থাকব। তাকবীরে তাশরীকের জন্য বিভিন্ন শব্দ হাদীসে উল্লেখ হয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বজনবিদিত পাঠ হল,

الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله والله أكبر، الله أكبر ولله الحمد.

নয় যিলহজ্ব হতে তের যিলহজ্ব আছর পর্যন্ত মোট তেইশ ওয়াক্তের নামাযের পর একবার করে তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। জামাতে নামায পড়া হোক বা একাকি, পুরুষ বা নারী, মুকীম বা মুসাফির সকলের উপর ওয়াজিব।

মাসআলা : প্রত্যেক ফরয নামাযের সালামের পর পরই কোনো কথাবার্তা বা নামায পরিপন্থী কোনো কাজ করার আগেই তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে। মাসআলা : তাকবীরে তাশরীক পুরুষের জন্য জোরে পড়া ওয়াজিব। আস্তে পড়লে তাকবীরে তাশরীক পড়ার হক আদায় হবে না। আর মহিলাগণ নিচু আওয়াজে অর্থাৎ নিজে শুনতে পায় এমন আওয়াজে পড়বে। Ñরদ্দুল মুহতার ২/১৭৮; এলাউস সুনান ৮/১৫২

মাসআলা : শুধু পাঁচ ওয়াক্ত ফরযের পর তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে। বিতরের পর এবং অন্য কোনো সুন্নাত বা নফলের পরে পড়ার নিয়ম নেই।

মাসআলা : ইমাম তাকবীর বলতে ভুলে গেলে মুক্তাদীগণ ইমামের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেরা তাকবীর বলবেন।

মাসআলা : নয় তারিখ থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত কোনো নামায কাযা হয়ে গেলে এবং ঐ কাযা এই দিনগুলোর ভিতরেই আদায় করলে সে কাযা নামাযের পরও তাকবীরে তাশরীক পড়বে।

॥ ৩। জিলহজ্জের মাসের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা ॥

সুনানে আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদের একটি বর্ণনায় এসেছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই নয়টি দিবসে রোযা রাখতেন। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৩৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২২২৩৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ২৪১৬

এছাড়াও এ দিনগুলোর রোযা সম্পর্কে একাধিক বর্ণনা আছে। যেগুলোর প্রায় সবই জঈফ পর্যায়ের। তবে সমষ্টিগত বিচারে তা আমলযোগ্য। অধিকাংশ ফকীহগণ এই নয় দিনে রোযা রাখা উত্তম বলেছেন।

॥ ৪। আরাফার দিবসে অর্থাৎ ৯ জিলহজ্জ (ঈদের আগের দিন) রোজা রাখা ॥

আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইয়াওমে আরাফার (নয় যিলহজ্ব) রোযার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, তিনি এর দ্বারা এর আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬২; জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৪৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪২৫

প্রকাশ থাকে যে, উক্ত হাদীসে বর্ণিত ইয়াওমে আরাফা দ্বারা যিলহজ্বের নয় তারিখ উদ্দেশ্য। এই তারিখের পারিভাষিক নাম হচ্ছে ইয়াওমে আরাফা। কেননা এই রোযা আরাফার ময়দানের আমল নয় বরং আরাফার দিন তো হাজ্বীদের জন্য রোযা না রাখাই মুস্তাহাব।

Post a Comment

0 Comments